Home Uncategorized বালু উত্তোলনে পদ্মায় ভাঙন, বিলীন ফসলি জমি

বালু উত্তোলনে পদ্মায় ভাঙন, বিলীন ফসলি জমি

47
0

পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের চর কণ্ঠগজরা এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুখোকোদের তাণ্ডব চলছে। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী পাড়ের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল মিলছে না।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পদ্মা নদীতে প্রতিদিন ১৫-২০টি ড্রেজার চালিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শতাধিক ট্রলির মাধ্যমে এসব বালু যাচ্ছে পাবনার পাকশী, ভাড়ারা, সুজানগর, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

সন্ধ্যার পর থেকে বালুখেকোদের আনাগোনা বাড়ে। রাত হলে শুরু হয় বালু উত্তোলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এস্কেভেটরগুলো সন্ধ্যা নামলেই চলে যায় পাশের পয়েন্টে। একে একে আসতে থাকে ছোট বড় সব ট্রাক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা-কুষ্টিয়ার কয়েকজন চিহ্নিত বালুখেকো এ কাজের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জে সহযোগী আব্দুল আলিম এবং পাবনার ভাড়ারা ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধির নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে বালু উত্তোলনের মচ্ছব চলছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট মহলগুলোকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন চলছে। গত সপ্তাহে বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করায় তিন কৃষককে বালুখেকোরা এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ কথা বলতে সাহস করছেন না। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই হয়রানির শিকার হতে হয়।

কোরবান আলী, আব্দুল কাদের, আওয়াল মোল্লা, জসিম উদ্দিন, খবির প্রামাণিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙনে প্রতিদিন কয়েক বিঘা করে ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই এ এলাকায় ফসলি জমি বলতে আর কিছু থাকবে না।

তারা জানান, অনেক প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাননি। উল্টো প্রতিবাদ করায় বালুখেকোদে দ্বারা অনেক কৃষক হয়রানি বা হামলার শিকার হয়েছেন সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন বলে তারা জানান।

চরতারাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে আমার ইউনিয়নের কৃষকদের জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। গত একমাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ সত্য নয়।

রিভারাইন পিপল পাবনার সভাপতি ড. মনছুর আলম বলেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পদ্মা-যমুনায় বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। এরা স্বার্থান্বেষী মহল। নিজেদের স্বার্থের জন্য নদীর ওপর অত্যাচার চালান।

তিনি বলেন, নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করলে নদীর গতি পথই পাল্টে যায়। নদীর পাড় ভাঙতে থাকে। এতে নদী ভাঙন দেখা দেয়। ফসলি জমি বা বাড়িঘর বিলীন হতে থাকে। চর কণ্ঠগজরা এলাকার মানুষেরা এ সমস্যায় পড়েছেন। তাই নদী ও কৃষক বাঁচাতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।

এ ব্যাপারে পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা যখন অভিযানে যায় তখন তারা পালিয়ে যায়। আমাদের জনবলও কম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here